ঢাকা , রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগামীর বাংলাদেশ তরুণদের হাতে তুলে দিতে চাই - ডা. শফিকুর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট সময় : ২০২৪-১২-২১ ২০:১৭:২০
আগামীর বাংলাদেশ তরুণদের হাতে তুলে দিতে চাই - ডা. শফিকুর রহমান আগামীর বাংলাদেশ তরুণদের হাতে তুলে দিতে চাই - ডা. শফিকুর রহমান




নিজস্ব প্রতিবেদক 

মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

আমরা পলিটক্রেসি নয় মেরিটক্রেসির ভিত্তিতে জাতি গঠন করবো। আগামীর বাংলাদেশকে তরুণদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা: শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, সাড়ে ১৫ বছর আমরা দফায় দফায় অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। কিন্তু সেই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারিনি। স্বৈরাচারকে আমরা তাড়াতে পারিনি, বিদায় করতে পারিনি। আমি গর্বিত আমাদের সন্তানেরা সেই কাজটি করে দেখিয়েছে। আমি আমাদের সন্তানদেরকে ভালবাসা উপহার দিচ্ছি। শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। জাতির পক্ষ থেকে তাদেরকে স্যালুট জানাচ্ছি। আল্লাহ তায়ালার সাহায্যে তারা অসাধ্য সাধন করেছে। এরকম সন্তান পেয়ে জাতি গর্বিত। ইনশাআল্লাহ আগামীর বাংলাদেশ আমরা তাদের হাতে তুলে দিতে চাই। 

২১ ডিসেম্বর শনিবার সকালে জেলা সরকারি হাইস্কুল মাঠে জেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন জেলা আমীর মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমীর ইঞ্জিনিয়ার মো শাহেদ আলী। অনুষ্ঠান যৌখভাবে পরিচালনা করেন  জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ ইয়ামির আলী ও সহকারী সেক্রেটারি হারুনুর রশিদ। বিশষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এড, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর উত্তরের  আমীর ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মো. ফখরুল ইসলাম ও সিলেট জেলা আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান। 

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, হবিগঞ্জ জেলা আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিশে সুরার সদস্য কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলার সাবেক আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মুতলিম ও আবদুল মান্নান, মৌলভীবাজার বিএনপি জেলা শাখার আহবায়ক ফয়জুল কবির ময়ুন, হেফাজতে ইসলামীর জেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক মাওলানা আবদুস সবুর, মৌলভীবাজার জেলার নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রহমান, ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর সভাপতি শরিফ মাহমুদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও পল্টন থানা আমীর শাহীন আহমদ খান, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আমিনুল ইসলাম,ছাত্রশিবিরের মৌলভীবাজার শহর শাখার সভাপতি তারেক আজিজ, ছাত্রশিবিরের মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি হাফেজ আলম হোসাইন, বড়লেখা উপজেলার সাবেক আমীর মো: কমর উদ্দিন, মৌলভীবাজার পৌর শাখার আমীর ও জেলা কর্মপরিষদ সদস্য হাফেজ মাওলানা তাজুল ইসলাম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলা আমীর মো: ফখরুল ইসলাম, বড়লেখা উপজেলার  আমীর মো: এমদাদুল ইসলাম, রাজনগর উপজেলার আমীর আবুর রাইয়ান শাহীন, কুলাউড়া উপজেলার আমীর অধ্যাপক আব্দুল মুনতাজিম, জুড়ী উপজেলার আমীর আব্দুল হাই হেলাল, শ্রীমঙ্গল উপজেলার আমীর মাও. ইসমাঈল হোসেন,কমলগঞ্জ উপজেলা আমীর মো: মাসুক মিয়া। 

আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বক্তব্যের শুরতেই জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের বীর সৈনিকদের একটি স্লোগান উচ্চারণ করে বলেন, বুকের ভিতর তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর। তাদের ক্ষোভটা ছিল সাড়ে ১৫টা বছরের। এসময়টায় তারা জাতির ঘাড়ে বসে সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। দেশটাকে শ্মশান কিংবা গোরস্তানে পরিণত করেছিল। 

তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর তারা লাশের ওপর নর্দন করেছে। তখনই তারা জানান দিয়েছিল যে ক্ষমতায় এসে খুন-গুমের রাজ্য কায়েম করবে। বোঝাপড়া করে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে  ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে তারা জয়লাভ করেছিল। ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি ক্ষমতায় বসে খুনের নেশা বাস্তবায়নের কর্মসূচি হাতে নেয়।

তিনি বলেন, ২৫ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি তারা পিলখানায় সেনাবাহিনীর চৌকস ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাকে খুন করে। সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেয়। বিডিআর বাহিনী ধ্বংস করে সেই বাহিনীর সাড়ে ১৭ হাজার সদস্যকে চাকুরীচ্যুত করলো। সাড়ে ৮ হাজারকে জেলে দিলো। জেলের ভেতর সাড়ে ৩শ’র অধিক মার্ইা গেল। আমাদের গর্বের বাহিনী ধ্বংস হলো। ক্ষমতায় যাওয়ার শেষ সিঁড়ি হিসেবে এদের ব্যবহার করে চক্রান্ত করে ধ্বংস করে দিলো। কারা হত্যাকারী ছিল জাতিকে জানতে দেওয়া হলো না। লুকোচুরি করা হলো। রাতের অন্ধকারে বিদ্যুতের আলো কেড়ে নিয়ে, অন্ধকার করে খুনিদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলো। একটা বিশেষ দেশের প্লেন কেন এসেছিল ঢাকায়। এরপর হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেল কিভাবে। তার জবাব স্বৈরাচারী সরকার না দিলেও একদিন তাদেরকে দিতে হবে। আমরা সেই হত্যাকা-ের বিচার চাই।

তিনি আরও বলেন, এরপর শুরু হলো তাদের তান্ডব। তারা প্রথম লক্ষ্যবস্তু করলো জামায়াতে ইসলামীকে; যারা পরিক্ষীত দেশপ্রেমিক, যারা সততায় দেশবাসীকে মুগ্ধ করেছিল। সেই সমস্ত নেতৃবৃন্দকে ঠা-া মাথায়, মিথ্যা অভিযোগে সাজানো কোর্ট, পাতানো সাক্ষী এবং ব্রাসেলস থেকে রায় এনে সেই সমস্ত নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা হলো। কাউকে কাউকে জেলে রেখে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হলো। তারা জেলের ভেতর মৃত্যু করলেন।

আমরা তখন সকল বন্ধু রাজনৈতিক সংগঠনকে বলেছিলাম, এটি শুধু জামায়াতের ওপর আঘাত নয়। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের এই বিশাল দেওয়াল ভেঙ্গে দিলে বাকীরা সবাই ভেসে যাবেন, কেউ টিকতে পারবেন না। আমাদের পাশে দাঁড়ান। ফ্যাসিজমকে সম্মিলিতভাবে আমরা মোকাবেলা করি। আমরা কথাগুলো বুঝাইতে পারি নাই। সবাই মিলে একসাধে সেই যুদ্ধটা করতে পারলাম না। তার পরের ইতিহাস আপনাদের সামনে পরিষ্কার। এক এক করে সবাইকে ধরলো। এমনকি এই যে সাংবাদিক বন্ধুরা আজকে এসেছেন নিউজ কাভার করতে; তাদেরকেও ধরলো। তাদেরকে আমাদের সাথে গুম করলো, খুন করল। আয়না ঘরে পাঠালো। কাউকে কাউকে ভারতের ওপাড়ে বর্ডারে নিয়ে ফেলে দিলো। এভাবে তারা সারাটা দেশকে নরকে পরিণত করেছিল। 

তিনি উল্লেখ করেন, আজকে যুবকরা বলতেছে আমাদের ভোট চুরি করেছিল। তিনটা নির্বাচন আজ যাদের বয়স ৩০-৩২ বছর; তারা একটা ভোটও দিতে পারেনি। তারা ভোটের, গণতন্ত্রের কবর রচনা করল। এদের বিচার বাংলার মাটিতে করতে হবে। প্রত্যেকটা অন্যায় অপরাধের বিচার করতে হবে। জাতিকে এরা ৫৩ বছর বিভিন্ন কায়দায় ফ্যাসিজমের মাধ্যমে দ্বিধাবিভক্ত করে রেখেছে। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, বিপক্ষের শক্তি. মেজরিটি শক্তি. মাইনরটি শক্তি, কতভাবে যে ভাগ করেছে এরা- তার ইয়ত্তা নেই। কারণ একটা জাতিকে যখন টুকরা টুকরা করা যায়, তখন তাদের গোলাম বানানো সম্ভব। এরা ধরে নিয়েছিল তারা দেশের মালিক, আমরা সবাই ভাড়াটিয়া। 

তিনি ভারতের উদ্দেশে বলেন, প্রতিবেশী দেশকে বলতে চাই- আপনারা শান্তিতে থাকেন। আমাদেরকেও শান্তিতে থাকতে দিন। আপনাদের পাক ঘরে কি পাকাবেন আমরা জিজ্ঞেস করি না। আমাদের পাক ঘরে উঁকি মারার চেষ্টা করবেন না। নিজেরা আয়নায় চেহারা দেখুন। আমাদের সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির সবক দিতে হবে না। 

আমীরে জামায়াত উল্লেখ করেন, যেখানে আমাদের শীর্ষ ১১ নেতাকে খুন করা হয়েছে, সবগুলো অফিস তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে, আমাদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যেখানে নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে, বেদিশা হয়ে শেষ পর্যন্ত নিষিদ্ধ পর্যন্ত করা হয়েছে। এতে যন্ত্রণা বুকে থাকা সত্ত্বেও আমরা বলেছি দেশকে ভালবাসি, মানুষকে আমরা ভালবাসি। 

আমীরে জামায়াত বলেন, আমরা একটা সাম্যের বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। বৈষম্যকে নির্বাসনে পাঠাবো। আমরা মেধার স্বীকৃতি প্রদান করবো. পলিটক্রেসি নয়, মেরিটক্রেসির ভিত্তিতে জাতি গঠন করবো। যুবকদেরকে আদর্শ শিক্ষা দিয়ে তাদের হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করবো। 

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় কোন ভাল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এগ্রিকালচার বিশ্ববিদ্যালয় নেই কেন? মৌলভীবাজার কী অপরাধ করেছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এই জেলার কৃতি সন্তান একজন কৃতি অর্থনীতিবিদ ছিলেন। তিনি সারাদেশকে সমান চোখে দেখতেন। আগামিবার একনেকে যেন মৌলভীবাজারে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ দিয়ে অন্য কোন উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেই দাবি জানান। 

তিনি বলেন, মৌলভীবাজারে দেশের সবেেচয়ে বেশি চা বাগান। রাষ্ট্রীয় যথাযথ পর্যবেক্ষণ না থাকায় চা শিল্প ধ্বংস হওয়ার পথে। মালিক পক্ষ চায়ের যথাযথ মূল্য পান না। শ্রমিকরাও পারিশ্রমিক পান না। তিনি নেতাকর্মীদের চারটি বিষয় তুলে ধরেন। এর মধ্যে নিয়ত সহি করে জ্ঞানের রাজ্যে এগিয়ে গিয়ে সাহসী হয়ে কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান করেন। সবশেষ তিনি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জাানন।   

এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, এই দেশে আর কোন চক্রান্ত মাথা চারা দিয়ে উঠতে দেওয়া হবে না। আর কোনো চক্রান্ত সফল হতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, সংস্কার এবং নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য নেতাকর্মীদের ঐতিহাসিক এবং ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসরদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা চক্রান্তকারীদের আর সুযোগ দেওয়া যাবে না। 

ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দীন বলেন, ছাত্র-জনতা এই দেশের অধিকাংশ মানুষের মনের ভাষা বুঝতে পেরেছিল বলেই স্লোগান তুলেছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ এবং বিপ্লব করে স্বৈরাচার তাড়িয়েছিল। নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের পুরানো ধ্যানধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশে নতুন ধারার রাজনীতি চালু করতে হবে। বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়তে হলে মানুষের আইন দিয়ে দেশ পরিচালনা করলে চলবে না। এর আগে যারা দেশ শাসন করেছিল তারা মানুষের আইন দ্বারা শাসন শোষণ করে দুর্নীতিকে প্রধান হাতিয়ার করে তুলেছিল। 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গত ৫৩ বছরে দেশের মানুষের সামনে ইসলামী অর্থনীতি, রাজনীতিসহ সবকিছুর মডেল উপস্থাপান করেছে। আমরা বক্তৃতায় বিশ্বাসী নই। কাজে বিশ্বাসী। 

তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে  কোন পরাশক্তি দেশের প্রতি চোখ রাঙ্গাতে পারবে না। আর কোন ফেলানীর লাশ কাঁটাতারে ঝুলবে না। সবাই স্বাধীনভাবে তার কর্মকা- পরিচালনা করতে পারবে ইনশাআল্লাহ।



 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ